ঢাকা , সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫ , ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
এবার বর্ণবাদের অভিযোগ আনলেন রুডিগার সিটির সামনে দাঁড়াতে পারলোনা আল আইন ১০ জন নিয়েই দাপুটে জয় পেলো রিয়াল অবশেষে ক্রিকেটারদের পাওনা অর্থ দিতে রাজি হলো ওমান টেস্টের নেতৃত্ব থেকেও সরে যাওয়ার গুঞ্জন শান্তর যা কারণে জাতীয় দলে জায়গা পেলেন না সোহান ওয়ানডে দলে জায়গা না পেয়ে সোহানের আক্ষেপ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টাইগারদের ওয়ানডে দল ঘোষণা নগর ভবন খুলে দেবেন ইশরাকের সমর্থকরা এভাবে চলতে থাকলে কিয়ামত পর্যন্ত শতভাগ ঐকমত্য হবে না : নুর কিছু বিষয় ‘অমীমাংসিত’ সব দলকে ছাড় দেয়ার আহ্বান আলী রিয়াজের প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে একমত জামায়াত-এনসিপি সায় নেই বিএনপির সর্বোচ্চ ১০ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ল ১০ হাজার কোটি টাকা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্র কি ইরাকের ভুল এবার ইরানে করছে-প্রশ্ন চীনের আমরা ইসরায়েলের জন্য সব হুমকি গুঁড়িয়ে দিয়েছি-ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন তুললেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্লজ্জ আগ্রাসন এর নিন্দা জানিয়েছে হামাস
* সড়ক দুর্ঘটনায় রোববার ৭ ও শনিবার ১১ জন নিহত * গত মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত

সড়কে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল

  • আপলোড সময় : ২৩-০৬-২০২৫ ০২:২২:২৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৩-০৬-২০২৫ ০২:২২:২৬ অপরাহ্ন
সড়কে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল
অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে রাজধানীসহ সারাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা। এই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিন মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। দুর্ঘটনাগুলি কেবল মানুষের জীবনই কেড়ে নিচ্ছে না, বরং অসংখ্য মানুষকে আহত ও পঙ্গু করে দিচ্ছে। সব দেখে মনে হতে পারে, সড়ক দুর্ঘটনা এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। এমন কোন দিন নেই, যেদিন সড়কে অকালে প্রাণ ঝরছে না, প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বাতাস ভারি হয়ে উঠছে না। সড়ক যেন এখন মরণফাঁদ। সড়কে কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। কিন্তু প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। গত দুইদিনে সড়কে নিহত হয়েছেন ১৮জন। এরমধ্যে গতকাল রোববার নিহত হয়েছে ৭জন এবং গত শনিবার মারা গেছে ১১ জন। শুধুমাত্র গত মে মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত হয়েছে। জানা গেছে, গোপালগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকাল ১১টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানী উপজেলার টুকুবাজার ও শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামের মৃত মঈনউদ্দিন খাঁ’র ছেলে সরোয়ার খাঁ (৯০), মুকসুদপুর উপজেলার কৃষ্ণাদিয়া গ্রামের মৃত মানিক কুমার পালের ছেলে বিপুল কুমার পাল (৫২) ও খুলনার দৌলতপুর থানার পাবলা গ্রামের রাজা শেখের ছেলে সোহাগ পরিবহনের হেলপার শাওন শেখ (১৮)। টুকু বাজারে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে স্থানীয়রা ৩০ মিনিট সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশ বিচারের আশ্বাস দিলে স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। তবে হাইওয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহত তিনজনের মরদেহ রোববার দুপুরে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত যানগুলো জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় মহাসড়কের ঠাকুরদিঘি বাজার এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই এলাকায় কন্টেইনারবাহী চলন্ত লরির পেছনে একটি ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় ড্রাম ট্রাকের চালক ও সহকারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ড্রাম ট্রাক চালক ফারুক হোসেন (৩৯) খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার বসু মিয়া পাড়ার আব্দুল মান্নানের ছেলে। নিহত চালকের সহকারী রবিউল ইসলাম (৩৫) টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার চক্করতৈল এলাকার আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে। একইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দা উপজেলার বাগুন্দা এলাকায় ড্রিমল্যান্ড বাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, কাভার্ডভ্যান ও হ্যান্ডট্রলির সংঘর্ষ ঘটে। এতে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরও অন্তত সাতজন। এদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রামের পটিয়ার বাইপাস রোডের বৈলতলী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস ও মাছবাহী একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ট্রাকচালক। এ ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন। নিহত ট্রাক ড্রাইভার মো. মোরশেদ (২৪) দোহাজারী এলাকার মো. মোস্তাকের ছেলে। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন বাস যাত্রী মো. রাকিব (১৯), আরিফুল ইসলাম (৩২) মো. আলিম (৫৫) ও সার্জেন্ট আকরাম হোসেন (৫০)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হয়তো চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে ও বাস ও ট্রাকের মধ্যে মুখোমুখী এ সংঘর্ষের ঘটে। এতে ট্রাক চালক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় শ্যামলী বাসের বেশকিছু যাত্রী গুরুতর আহত হন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৬ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মেয়েসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার এবং শনিবার বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। বরগুনার আমতলী-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কে কেওয়াবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে বাসচাপায় ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা বাবা-মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার বিকেলে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস সড়কে বাসচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চার যাত্রী নিহত হয়েছেন। এদিন কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর এলাকার চণ্ডিবের মধ্যেপাড়ায় বাড়ির সামনের রাস্তায় ট্রাক্টরচাপায় প্রাণ হারান লামিম মিয়া (২৩) নামের এক নির্মাণশ্রমিক। তিনি চণ্ডিবের মধ্যেপাড়ার শাহাজান মিয়ার ছেলে। দুর্ঘটনার পর জনতা ট্রাক্টরটি জব্দ করলেও চালক পালিয়ে যান। শিবগঞ্জ উপজেলায় ট্রাকচাপায় আখতারুল ইসলাম (৪৫) নামের এক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার শরত্নগর গ্রামের কালু মণ্ডলের ছেলে। শুক্রবার সকালে কানসাট সোলেমান মিয়া ডিগ্রি কলেজের সামনে সোনামসজিদ স্থলবন্দর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানিকগঞ্জের চরখণ্ড গোলড়ায় বাসচাপায় নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেলচালক তারা মিয়া (৩৫)। তারা মিয়া মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের মৃত মোসলেম মিয়ার ছেলে। একইদিন ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন চারজন। একইভাবে সারাদেশে প্রতিদিন ঘটে চলেছে সড়ক দুঘটনা। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না নাগরিক সমাজ। প্রতিদিনই দেশের কোথায় ও না কোথায়, অবিরাম ঘটে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। কোনো কিছুতেই এই দুর্ঘটনা থামানো যােিচ্ছ না। এর নেপথ্যে রয়েছে-চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, যানবাহনের ত্রুটি, রাস্তার অবস্থা, পথচারীদের অসচেতনতা। এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট্ররা। একইসঙ্গে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের দাবি, প্রতিটি যানবাহনের চাবি তুলে দেয়ার আগে গাড়ির চালকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা, রাস্তার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা, গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার মতো একটি জটিল সমস্যা সমাধান করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছরে বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১২ লাখ মানুষ নিহত হয়। রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর আয়োজিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন সকলের জন্য প্রয়োজন’ শীর্ষক সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের রোড সেফটি প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান। সড়ক নিরাপত্তা আইনের আলোচ্য বিষয়ে উপস্থাপনায় শারমিন রহমান আরও জানান, বিশ্বে রোডক্র্যাশে মৃত্যুর ৯২ শতাংশ নিম্ন ও মাধ্যমে আয়ের দেশে এবং মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি হচ্ছে পথচারী, সাইকেল ও মোটরসাইকেল আরোহী। ওয়ার্ল্ড হেলথ বা ঙ্কিং অনুসারে, সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম। সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ ব্যতীত দেশে রোডক্র্যাশ কমানো বা রোধ করা সম্ভব নয়। সঠিক আইন ও তার প্রয়োগের ফলে সড়ক দুর্ঘটনা, যা বর্তমানে একটি বড় সমস্যা, তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যেতে পারে। তাই সকলের জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’। সভায় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক (ক্রাইম) শুভ্র দেবের সঞ্চালনায় নিরাপদ সড়ক জোরদারকরণে ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়নের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ইউএনবির বিশেষ প্রতিনিধি মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক জামিউল আহ্ছান শিপু এবং দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার নিজস্ব প্রতিনিধি (ক্রাইম) ইমন রহমান। এসময় আলোচকরা বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এবং এর বিধিমালা মূলত সড়ক পরিবহন খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত কিন্তু সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এগুলো যথেষ্ট নয়। সড়ক অবকাঠামো ও যানবাহনের নিরাপত্তা, সড়ক ব্যবহারকরীর নিরাপত্তা, দুর্ঘটনার পরবর্তী ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসার মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এতে যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। সুতরাং, সড়কে সব ধরনের সুরক্ষা সম্পর্কিত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য পৃথক ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন করা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপনে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ ও সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ মূলত পরিবহন সংক্রান্ত আইন। তাই সড়ককে অধিকতর নিরাপদ করতে ও রোডক্র্যাশ কমাতে এই আইন ও বিধিমালা যথেষ্ট নয়। এ জন্যই জাতিসংঘ প্রস্তাবিত বর্ণিত ৫টি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে একটি সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন অতীব জরুরী। সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। গত মে মাসে সারাদেশে ৫৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬১৪ জন, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১১৯৬ জন। এছাড়া রেল ও নৌপথ মিলিয়ে মে মাসে মোট ৬৫২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬৫৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১২১০ জন। গতকাল রোববার এতথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব খন্দকার মোজাম্মেল হক। তিনি জানান, সড়কে প্রাণহানির প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে যানবাহনের বেপরোয়া গতি, সড়কে শৃঙ্খলার অভাব ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা। গত মে মাসে ৫৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত ও ১১৯৬ জন আহত হয়েছেন। এই মাসে রেলপথে ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন। নৌপথের ৭টি দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৬৫২টি দুর্ঘটনায় ৬৫৮ জন নিহত এবং ১২১০ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে ২৩৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৫৬ জন নিহত ও ২০১ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৯.০২ শতাংশ, নিহতের ৪১.৬৯ শতাংশ ও আহতের ১৬.৮০ শতাংশ। এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। সেখানে ১৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত ও ২৭১ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। সেখানে ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৫৪ জন চালক, ১০৩ জন পথচারী, ৬৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৯২ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন শিক্ষক, ৮৮ জন নারী, ৫৮ জন শিশু, ৩৭ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন-২ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন সেনাবাহিনী সদস্য, ১ জন ফায়ার সার্ভিস সদস্য, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১৪২ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৯৫ জন পথচারী, ৫৯ জন নারী, ৫৪ জন শিশু, ৬৬ জন শিক্ষার্থী, ৩৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫ জন শিক্ষক ও ৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৯৪৫টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৯.৪১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.৫৩ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১২.৪৮ শতাংশ বাস, ১৪.১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৬.৬৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৯.৩১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫.৩৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৯.০৭ শতাংশ গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ২৪.৯৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০.১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, ৫.০২ শতাংশ বিবিধ কারণে, চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ০.৩৩ শতাংশ, এবং ০.৫০ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিআরটিএ’র দুর্নীতির কারণে ফিটনেসবিহীন, অযোগ্য ও অবৈধ যানবাহন এবং অদক্ষ চালক রাস্তায় চলাচল করছে। লাইসেন্স, ফিটনেস সনদ ও রেজিস্ট্রেশন পেতে ঘুষের মাধ্যমে নিয়মবহির্ভূত ছাড়পত্র পাওয়া যায়। ফলে সড়কে ঝুঁকি ও দুর্ঘটনা বাড়ছে। ২০২৪ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২,৫৭০ জন, যা মোট নিহতের প্রায় ৩০ শতাংশ। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যান, চালকের অদক্ষতা, সড়কের নির্মাণ ত্রুটি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্নীতিও উল্লেখযোগ্য। তবে ইলিয়াস কাঞ্চন সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সড়ক আইনের যথাযথ প্রয়োগের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা একটি যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ এবং প্রতিদিন এই দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তাই, সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকলে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি মনে করেন, জনসচেতনতা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়। তিনি জনসাধারণকে সড়কের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন হতে উৎসাহিত করেন। তিনি সড়ক আইনের যথাযথ প্রয়োগের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তার মতে, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং সকলে যেন আইন মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি সরকারের একার পক্ষে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন। এজন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তিনি রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে সকলের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি সড়ক দুর্ঘটনাকে যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেন, কারণ এতে প্রতিদিন বহু মানুষের জীবনহানি ঘটে। এ বিষয়ে শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সড়কে সংঘটিত সব দুর্ঘটনার জন্যই চালক ও হেলপারকে দায়ী করার প্রবণতা রয়েছে। এই প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালককে দায়ী করার প্রবণতা রয়েছে। এসব দুর্ঘটনার জন্য চালক-হেলপার দায়ী থাকেন না। বিভিন্ন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। এর জন্য সড়ক অবকাঠামো, গাড়ি, পথচারী, চালকও দায়ী থাকে। তিনি আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় চালক দোষী হলে তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে শান্তি দিতে হবে। একইসুরে কথা বলেছেন ওয়ার্কার্স পাটির সাবেক সাধার সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক। তিনি বলেন, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শুধু পরিবহন খাত নয়, বরং সড়ক অবকাঠামো, যানবাহনের মান, ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা, দুর্ঘটনার পরবর্তী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিতে হবে। তবে এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, চালকদের প্রশিক্ষণ, গাড়ির ফিটনেস নিশ্চিত করা, এবং ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এছাড়াও, সড়কের অবস্থা উন্নত করা এবং পথচারীদের জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স